অনলাইন ডেস্ক।।
রাকিব হোসেন (৯) ও সিয়াম হোসেন (৮) সম্পর্কে চাচাতো ভাই। পিঠাপিঠি বয়স হওয়ায় খেলাধুলা, ঘোরাফেরা, পড়াশোনা একসঙ্গে। কিন্তু কে জানত, তাদের দুজনকে একসঙ্গে জীবনও দিতে হবে। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি শান্তিপাড়া গ্রামে। খেলতে বের হয়ে বাড়ির অদূরে একটি পুকুরে ডুবে প্রাণ হারাতে হয়েছে সহপাঠী, বন্ধু, ভাই রাকিব ও সিয়ামকে। আজ সোমবার দুপুরে তাদের মরদেহ হাতিবান্ধা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের উজিয়াল শান্তিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিনের প্রথম সন্তান রাকিব হোসেন এবং ফরিদের ভাই সাদ্দাম হোসেনের প্রথম সন্তান সিয়াম হোসেন। রাকিব-সিয়াম এক বছরে ছোট-বড়। রোববার (০৬ আগস্ট) বেলা তিনটায় খাওয়া শেষে দুজনই খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি।
বাড়ি না-ফেরায় পরিবারের লোকজন রাকিব-সিয়ামকে খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির ১০০ গজ দূরের প্রতিবেশী লিটন প্রামাণিকের পুকুরে রাকিব ও সিয়ামকে ভাসতে দেখতে পান। এরপর এলাকাবাসী পুকুর থেকে রাতেই লাশ উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী ও পুলিশের ধারণা, খেলতে গিয়ে পা পিছলে ওই দুই শিশু পুকুরে পড়ে যায়। সাঁতার না জানায় তারা পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়।
সোমবার (০৭ আগস্ট) উজিয়াল শান্তিপাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। শান্তিপাড়ার শান্তি যেন উড়ে গেছে কোথাও। রাকিব হোসেন ও সিয়াম হোসেনের বাড়িতে চলছে মাতম।
সন্তান হারানোর কথা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন সিয়ামের বাবা সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘পেটের তাগিদে চার দিকে ছোটা লাগে। তিন দিন আগে কাজের জন্য ঢাকা যাই। ঢাকা না গেলে আজ ছাওয়াটাক হারানু না হয়। ছাওয়াটার মরা মুখ দেখির নাগিল না হয়। আল্লাহ এ কেমন শান্তি আমাকে দেইল।’
রাকিবকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা আঞ্জু বেগম। প্রতিবেশী স্বজনেরা তাঁকে ধরে তেল মালিশ করছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই শুরু করেন বিলাপ। বলছিলেন- ‘বাবা, জাদু কোনঠে গেলু। কলিজার টুকরাটা মোক ছাড়ি গেলরে। মোর গলা ধরি এ্যালা কায় ঘুম যাইবেরে। বাবা রাকিব, আয় বাবা, আয় বলে ফের মূর্ছা যান।’
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। কোমলমতি শিশু দুটিকে হারিয়ে পরিবার দুটি নিঃস্ব। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। বর্ষা মৌসুম সবাইকে সচেতন হতে হবে, শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে।